বাত জ্বরের লক্ষণ, কারণ, জটিলতা ও প্রতিকার
তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার বাংলাদেশেও অতিপরিচিত রোগ। শিশুরা সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ৫-১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশসাধারণত, হাড়ে হাড়ে অথবা গিরায় গিরায় ব্যথাকে বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার হিসেবে ধরা হয়। তবে সব সময় এ ধারণা সঠিক নয়।
বাত জ্বরে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হয়। এছাড়া উপসর্গ এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল এটি নিশ্চিত হওযবাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভারে মুখ্য এবং গৌণ, দুই ধরনের লক্ষণ রয়েছে।
একটি বা দুইটি মুখ্য লক্ষণের সঙ্গে দুটি গৌণ লক্ষণ নিশ্চিতভাবে মিলে গেলে বাত জ্বর নির্ণয় করা যায়। তবে এর সঙ্গে বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত সংক্রমণের লক্ষণ বা প্রমাণও থাকা লাগবেস্ট্রেপটোকক্কাস নামক এক প্রকার বিশেষ শ্রেণির জীবাণুর আক্রমণের কারণে বাত জ্বরে আক্রান্তদের গলায় এবং গিরায় ব্যথা হয়ে থাকে। এর সঙ্গে জ্বর মিলিয়ে বাত জ্বরের প্রকাশ।
সচরাচর গলাব্যথা হওয়ার দুই থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর এ রোগ দেখা দেয়। দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে কোনো চিকিৎসা না পেলেও রোগ সেরে গেছে মনে হতে পারে। তবে কিছুদিন পরে আবার এসব উপসর্গ দেখা এই লেখাটিতে আমরা চেষ্টা করেছি বাত জ্বরের লক্ষণ, কারণ, জটিলতা এবং প্রতিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। এতে সঠিক সময়ে আপনি বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।
বাত জ্বরের লক্ষণ
অপরিষ্কার খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মাধ্যমে বিটাহিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে টনসিল ও গলার গ্রন্থিকে আক্রমণ করে বাত জ্বরের উপক্রম ঘটায়। এ রোগের পরিণতি ভয়াবহ। বাত জ্বরের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগের উপসর্গ ও লক্ষণগুলোকে মুখ্য এবং গৌণ দুটি ভাগে ভাগ করে থাকে
মুখ্য লক্ষণ
- হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ। যার ফলে বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হতে পা
- সাধারণত শরীরের বড় বড় অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। একটি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার পর অন্যটি আক্রান্ত হয়। বুকে ও পিঠে লাল বর্ণের
- হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশের নিয়ন্ত্রণহীন কাঁপুনি।
- ত্বকের নিচে শিমের বিচির মতো ছোট আকৃতির শক্ত ও ব্যথাযুক্ত দানা।
- বুকে বা হাতে_পায়ে র্যাশ হতে পারে।
গৌণ লক্ষণ
- স্বল্পমাত্রার জ্বর
- গিরায় গিরায় ব্যথরক্ত রক্তে ইএসআর বা CRP বৃদ্ধি
- ইসিজি পরিবর্তন: P-R- এর ব্যবধান দীর্ঘায়িত হওয়া
বাত জ্বরের কারণ ও জটিলতা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এবং অজ্ঞতাই এ রোগের প্রধান কারণ। অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে শিশুরা বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয়। সাধারণত স্ট্রেপ্টোকক্কাল গলায় সংক্রমণের দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে এই রোগটি দেখা দেয়।
বাত জ্বরের ফলে কখনো কখনো বাতজনিত হৃদ্রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর থেকে হৃৎপিণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া এতে হৃৎপিণ্ডের ভালভের সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন জোড়া বা জয়েন্টে ব্যথা থাকে এবং জয়েন্ট নষ্টও হয়ে যেতে পারে
বাত জ্বরের প্রতিকার
৫-১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের গলায় প্রদাহ বা গলা ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করানো হলে বাতজ্বরের আক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। Inj. Benzathine Penicillin for IM সিঙ্গেল ডোজ অথবা PhenoxymethylPenicillin ট্যাবলেট/ সিরাপ ১০দিন গ্রহণ করলেই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কোনোকিছুই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা যাবে বাত জ্বর হয়েছে, এমন সন্দেহ হলে প্রথমেই একজন এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ঘরে বসেই একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান বা অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ব্যবহার করতে পারেন ডকটাইম অ্যাপ । এই অ্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে অনলাইনেই ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনি ডাক্তারের কনসালটেশন নিতে পারবেন। কনসালটেশন নেওয়ার পর পরই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অ্যাপের মাধ্যমেই পেয়ে যাবেএছাড়া ডাক্তারের প্রেসক্রাইবড ঔষধ কিনতেও আপনাকে বাইরে যেতে হবে না।
ডকটাইমে অ্যাপের মাধ্যমে ঔষধ অর্ডার করলে সর্বোচ্চ ১০% ছাড়ে ঘরে বসেই পেয়ে পাবেন প্রয়োজনীয় সব ঔষধ। করতে পারবেন ডায়াগনস্টিক টেস্টও। দক্ষ ও অভিজ্ঞ ল্যাব টেকনিশিয়ানরা বাড়িতে এসে আপনার ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে যাবে।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাপে এবং বাড়ির ঠিকানায় পেয়ে যাবেন টেস্টেরযারা এক বা একাধিকবার বাত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বা বাত জ্বরজনিত হৃদরোগে ভুগছে, তাদের প্রতি ৩-৪ সপ্তাহ পর একটি বেনজাথিন পেনিসিলিন ইনজেকশন নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দিনে দুইবার পেনিসিলিন ট্যাবলেট গ্রহণ করার পরামর্শ দেনযেসব শিশু-কিশোররা বাত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কিন্ত হৃদযন্ত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি, তাদের ৫ বছর এই প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেসব শিশু-কিশোররা বাত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কিন্ত হৃদযন্ত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি, তাদের পরের ৫ বছর অথবা ২১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। বাত জ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত অথবা আজীবন এই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাত জ্বর হলে করনীয়
- পেনিসিলিন গ্রহণের মাধ্যমে বাত জ্বর ও বাত জ্বরজনিত হৃদরোগ বা রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কোনো ঔষুধই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেওয়া যাবে না। শিশুর বাত জ্বর হলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে দ্রুতই চিকিৎসা নেওয়া উচিত। বাত জ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে এ ব্যবস্থা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘদিন পর্যন্ত, কখনো বা সারা জীবন পর্যন্ত গ্রহণ করতে হতে পারে। এছাড়া বাত জ্বর হলে যেসব নিয়ম মেনে চলা বিশ্রামে থাকা
- মুক্ত বিশুদ্ধ বাতাস এবং খোলা পরিবেশে সময় কাটানোদাঁত, মুখ বা যেকোনো ইনফেকশন থেকে সতর্ক থাকা
- ঠান্ডা থেকে সতর্ক থাকা
- প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফল, মাছ এবং শস্যজাতীয় খাবার খাওয়চা, কফি, টিনজাত খাবার এড়িয়ে চলবাইরের তৈরি খাবার না খাওয়া
- বাত জ্বর প্রতিরোধে করণীয় অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারীদের মধ্যেই এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার প্রতিরোধে এমন পরিবেশ এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। একটু সতর্ক থাকলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। জেনে নিন বাত জ্বর প্রতিরোধে কী কী সচেতন মেনে চলা উচিখাবার পরে হাত-মুখ ভালো করে ধোওয়াসকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে শোয়ার আগে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করা
- বাথরুম ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা
- নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি পান করাগলাব্যথা হলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
- প্রয়োজনে হালকা গরম পানি এবং লবণ দিয়ে দিনে তিনবার গার্গল কর
উপসর্গ ভালো হয়ে গেলেও বাত জ্বরের প্রতিষেধক চিকিৎসা বন্ধ করা উচিৎ নয়। এই রোগ একবার হলে, বারবারই হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভারে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতে নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। এতে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
Sources:
https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/rheumatic-fever/symptoms-causes/syc-20354588
https://www.healthline.com/health/rheumatic-fever#diagnosis
https://www.cdc.gov/groupastrep/diseases-public/rheumatic-fever.html